অনুরোধ
 মানবজমিন পত্রিকায় শালকী নদীর পাড়ে উপন্যাসের একাংশ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশিত ওই অংশ পড়েই আমি বই আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই। লেখকের প্রথম উপন্যাস হলেও আমার কাছে সবকিছুই যেন নতুন মনে হয়েছে। শব্দগুলো খুব কাছের। উপন্যাসে ব্যবহৃত স্থানগুলো চেনা জনপদ। বাপ-দাদার মুখে যা শুনেছি- তার স্পষ্ট বর্ণনা খুঁজে পেয়েছি শালকী নদীর পাড়ে উপন্যাসে। মু আ কুদ্দুস কবি। তার কবিতা যেমন সহজ, তেমনি উপন্যাসে বসিয়েছেন মিষ্টি শব্দ। উপন্যাসের চরিত্রগুলো হিন্দু পরিবারের। একজন মুসলমান লেখক হয়ে কিভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচার-আচরণ সামাজিক কর্মকাণ্ড এতো নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন- আমি বিস্মিত হয়ে যাই। ইতিমধ্যে তিনি কবিতার জন্য সম্মাননা পেয়েছেন; পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। পাঠক নন্দিত এই লেখকের উপন্যাস ভালো হবে এটা- বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন প্রকাশক হয়ে সামান্য হলেও বুঝি গ্রন্থটি প্রকাশের দাবি রাখে। এমন বোধ থেকেই আমি শালকী নদীর পাড়ে উপন্যাসটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। সুস্থ ভাবনার এই উপন্যাস কালজয়ী হবে এমন একটা তাড়না আমাকে প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে।
 যারা বই পড়েন তারাও উপন্যাসটি পড়ে আমার ভাবনার সঙ্গে এক হবেন। শালকী নদীর পাড়ে উপন্যাসে পাঠকদের নতুন ভাবনার জোগান দেবে নিঃসন্দেহে। অনুরোধ, অনেক বিখ্যাত ঔপন্যাসিকের উপন্যাস পড়েছেন, এবার শালকী নদীর পাড়ে পড়ে দেখুন না- আমি কতটা ভুল করেছি। আমি নগ্নতা স্পর্শ করতে চাইনে। ঘৃণা আর ক্রোধ আমার প্রতিপক্ষ। সুন্দর এবং বাস্তবতা এবং ফেলে আসা দিনের স্মৃতি গ্রন্থিত করা নেশা আমার আশৈশব থেকে। সেই চেতনা আমাকে শালকী নদীর পাড়ে উপন্যাস প্রকাশে উৎসাহিত করেছে।
 আশাকরি, উপন্যাসটি আপনারা পড়বেন। পারিবারিক পাঠাগারে আপনার আগামী প্রজন্মের জন্য রাখবেন। দেখবেন আপনার নাতি-নাতনীরাই বলবে, আমাদের সংগ্রহের সবগুলো বইয়ের মধ্যে শালকী নদীর পাড়ে উপন্যাসটি শ্রেষ্ঠ। আমার বাবা কিংবা দাদু ভুল করেননি।
 - প্রকাশক
 লেখার উৎস
 শালকী নদীর পাড়ে আমার প্রথম উপন্যাস। বাবা আজিজার রহমান আর দাদির মুখে শোনা কথাগুলোকেই একসুরে বেঁধে রাখবার চেষ্টা করেছি। দাদি ছিলেন একজন সুন্দরী মহিলা। তার ঘৃণা ছিল অপরিষ্কারে। ভালোকে আদর করতেন। আমি ছিলাম বড়বাড়ির সন্তান। এক হাঁড়িতে শতাধিক মানুষের খাওয়া দেখভাল করতেন দাদিমা। সূর্য ওঠার আগে বিশাল বাড়ির আঙ্গিনা নিজ হাতে ঝাড়– দিতেন। ঘুম থেকে সবাইকে জাগিয়ে তুলতেন- দোয়েল পাখির মতো। গুণবতী এ দাদির সঙ্গে ঘুমাতাম আমি। রাত জেগে হাজারও কিস্সা শোনাতেন আমাকে। সেই শোনানো গল্পের একটা শালকী নদীর পাড়ে। এ উপন্যাসের হিন্দুয়ালী শব্দগুলো আমার বাবা চিনিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের স্মৃতি আমাকে এ উপন্যাস লেখার সাহস জুগিয়েছে। উপন্যাস লিখতে জানি না বলেই হয়তো একবছর লেগেছে শেষ করতে। কারণ কবিতার মানুষ উপন্যাস লিখতে কষ্ট হয় কিনা জানি না, তবে আমার বেলায় হয়েছে। এটা-সেটা জানতে এবং খুঁজতে এবং বুঝতে সময় লেগেছে। উপন্যাসটি যখন লেখার মাঝামাঝি অবস্থায় তখন এর একাংশ প্রকাশিত হয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যায়। এতোটুকু লেখাতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি কিন্তু আগ্রহীদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক প্রয়াত সাযযাদ কাদির ও সাবেক বার্তা সম্পাদক মিলান ফারাবির তাগাদায় লেখা শেষ করতে বাধ্য হই। তাদের কাছে আমি ঋণী। গোলাম কিবরিয়া তার প্রকাশনা কারুবাক থেকে গত বছরই বই প্রকাশ করতে চাইলেও আমি তাকে সময়মতো পাণ্ডুলিপি দিতে পারিনি। এবার তারই জোরালো চেষ্টায় জমিদারবাড়ী উপন্যাসটি নতুন নামে- শালকী নদীর পাড়ে বই আকারে প্রকাশ পেলো। এজন্য তার কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।
 উপন্যাসের শেষ অংশটুকু মানবজমিন পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলছি নীলফামারী জেলার ডোমারকে জমিদারবাড়ীর আবাসস্থল করা হয়েছে। সূত্র শালকী নদী। জমিদারদের আচার-আচরণ, শাসন-শোষণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের খণ্ডিত চিত্রগুলোই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। অনুরোধ পড়বেন। ভালো নাই বা বললেন- গালিটাতো দিতে পারবেন। 
 এমনটি উদারতা নিশ্চয়ই আশা করতে পারি।
 - মু আ কুদ্দুস
                                     
                                    
0 Review(s) for শালকী নদীর পাড়ে